এলকপ আয়োজিত “ফেইক নিউজঃ মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি” শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা ‘এলকপ’ কর্তৃক গত ৩১শে জানুয়ারী ২০২৩ তারিখে রাজধানীর সিক্স সিজনস্‌ হোটেলে “ফেইক নিউজঃ মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি” শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এলকপের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডঃ মিজানুর রহমানের স্বাগত বক্তব্যর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সেমিনারটি আরম্ভ হয়। তিনি তাঁর বক্তব্যে এলকপের হিউম্যান রাইট্‌স সামার স্কুল ও কমিউনিটি ল রিফর্ম সহ আরও অন্যান্য কার্যক্রম তুলে ধরেন।

সেমিনারের প্রথম সেশনে ‘ফেইক নিউজঃ সার্ক ও ব্রিকস্‌ভুক্ত (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার সমন্বয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক জোট) দেশসমূহে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি’ শিরোনামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সেলিম সামাদ। তিনি তার প্রবন্ধে ফেইক নিউজ নিয়ন্ত্রণে দক্ষিন এশিয়া ও ব্রিকস্‌ভুক্ত দেশসমূহের সম্মিলিত প্রচেষ্টার অভাবকে চিহ্নিত করেছেন। প্রথম সেশনের পরবর্তী অংশে ‘ফেইক নিউজঃ বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি’ শিরোনামে পেপার উপস্থাপন করেন এলকপের  গবেষক আরেফিন মিজান। তিনি তার প্রবন্ধে আলোচনা করেন কীভাবে ফেইক নিউজ গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও প্রতিষ্ঠানের উপর আস্থা কমিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। ‘একজন আর দশ জনকে শিখাই’ স্লোগানের মাধ্যমে ফেইক নিউজ প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে তাঁর প্রবন্ধ উপস্থাপনা শেষ করেন। উক্ত সেশনে নির্ধারিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ থেকে অধ্যাপক ডক্টর আবুল বারাকাত, ভারত থেকে ডক্টর অর্ঘ্য সে্নগুপ্ত এবং পুলকেশ ঘোষ। ডঃ বারাকাত বলেন ফেইক নিউজকে মোকাবেলা করতে যুগোপযোগি আইনি কাঠামো, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানসমূহের অঙ্গিকার, ও নাগরিক সমাজের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। ডঃ অর্ঘ্য বলেন যেহেতু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ফেইক নিউজ ছড়াচ্ছে, সেহেতু প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকেও দায়িত্ব নিতে হবে।

সেমিনারের দ্বিতীয় সেশনে ‘ফেইক নিউজঃ সার্ক ও ব্রিকস্‌ভুক্ত দেশসমূহে মানবাধিকারের জন্য হুমকি’ শিরোনামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এলকপের গবেষক অরুপ রতন সাহা। তিনি তার প্রবন্ধে মানবাধিকারের উপর ফেইক নিউজের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করার পাশপাশি এসব দেশে যেসকল আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা তুলে ধরেন। এরপর এলকপের গবেষক মোঃ জহির উদ্দিন সোহাগ ‘ফেইক নিউজঃ বাংলাদেশের মানবাধিকারের জন্য হুমকি’ শিরোনামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি তার উপস্থাপনায় তুলে ধরেন কিভাবে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানসমূহের উত্থান ও পপুলিজমের কারনে ফেইক নিউজ এর দ্রুত বিস্তার হয় এবং এর ফলশ্রুতিতে সাধারন জনগন উত্তেজিত হয়ে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করতে পারে। ঊক্ত প্রবন্ধে উপস্থাপন করা হয়েছে কিভাবে ফেইক নিউজ বাংলাদেশের মানবাধিকারের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। উক্ত সেশনে নির্ধারিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ থেকে অধ্যাপক ডঃ ইমতিয়াজ আহমেদ, নেপাল থেকে অধ্যাপক ডঃ যুবরাজ সাংরুলা, ভারত থেকে ডঃ লোপামুদ্রা মৈত্রী বাজপাই, এবং রাশিয়া থেকে ‘স্পুটনিক’ নামক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ভাসিলি পুশকভ। অধ্যাপক ডঃ ইমতিয়াজ আহমেদ ভারতীয় উপমহাদেশে ফেইক নিউজের ইতিহাস আলোচনা করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে প্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষা ও জনসচেতনতার উপর গুরুত্বারোপ করেন। নেপালের সাবেক এটর্নি জেনারেল ডঃ যুবরাজ বলেন ফেইক নিউজ বন্ধ করার জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ডঃ লোপামুদ্রা ফেইক নিউজ প্রতিরোধে তৃণমূল পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের উপর আলোকপাত করেন।

প্রতিটি পর্ব শেষে উন্মুক্ত আলোচনায় অন্যান্যদের মধ্যে অংশগ্রহন করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জহিরুল ইসলাম খান পান্না, কূটনীতিকদের মধ্যে নেপাল দূতাবাস থেকে ললিতা সিল্বাল, রাশিয়ান দূতাবাসের পলিটিক্যাল কাউন্সিলর অ্যানটন চেরনভ, আদিবাসি অধিকার বিষয়ক সংস্থার সভাপতি সঞ্জীব দ্রং, বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এর সভাপতি কাজল দেবনাথ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক মোঃ বায়েজিদ হোসেন, নজরুল ইসলাম মিঠু প্রমুখ।

ফেইক নিউজ প্রতিরোধের অঙ্গিকার নিয়ে এলকপের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বলের সমাপনি বক্তব্যের মাধ্যমে বিকাল ৫টায় সেমিনারটি শেষ হয়।