মোহাম্মদ হুমায়ূন কবীর
অনুলিখন: ওয়াজিহা তাসনিম
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানবিক সমাজের দর্শনে বিশ্বাস করতেন। তাই তিনি স্বাধীনতার পর বিশ্বব্যাপী সেই দর্শন ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিলেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল দর্শন নির্ধারণ করলেন- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। এই দর্শনে অন্তর্নিহিত আছে নীতি, আদর্শ, মূল্যবোধ, দিক নির্দেশনা, শান্তির অন্বেষণ এবং উন্নয়নের মন্ত্র।
মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের মাটিতে পা রেখেই বঙ্গবন্ধু নতুন করে সোনার বাংলা গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। এরপর তিনি অস্থায়ী সাংবিধানিক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে দীর্ঘ প্রতিশ্রুত সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে রচনা করেন নতুন সংবিধান। বাহাত্তরের সংবিধানে বলা হয়েছিল, ‘বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তির ব্যবহার থেকে নিরস্ত্র থাকবে এবং পরিপূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের জন্য সচেষ্ট হবে।’ সেই সঙ্গে প্রণয়ন করা হয় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি, যা বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ নং ২৫, ৬৩, ১৪৫ সহ বিভিন্ন অনুচ্ছেদে বর্ণিত রয়েছে। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এসব মূলনীতি কাগজে-কলমে অনুসরণ করে থাকে। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ এসব সংগঠনের মূলনীতিসমূহ অনুসরণ করে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান নীতিসমূহ এসব সংগঠনের নীতির সাথে অত্যন্ত সাদৃশ্যপূর্ণ।
পঞ্চাশের দশকের স্নায়ুযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক দর্শনের বিকাশ ঘটে। যেমন: পঞ্চাশের দশকে পাকিস্তান জোট নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ না করে CENTO ও SEATO সামরিক চুক্তিতে যুক্ত হয়ে পড়ে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সামরিক চুক্তি স্বাক্ষর করে। বঙ্গবন্ধু এ নীতির তীব্র বিরোধিতা করেন। বঙ্গবন্ধু বহু আগে থেকেই জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির পক্ষপাতী ছিলেন, এটি বোঝা যায় ১৯৫৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে তাঁর বক্তব্য থেকে। তিনি বলেন, “We should have friendly relations with all the countries of the world.” বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতির মূল কথা হলো বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান: ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়।’ এ নীতির ভিত্তিতেই আজকের বাংলাদেশ বিশ্ব সমাজের সঙ্গে দৃঢ়, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।
পররাষ্ট্রনীতির প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল একটি দেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা। প্রতিটি রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণের জন্য পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করে। পররাষ্ট্রনীতিকে প্রভাবিত করে এমন বিষয়গুলোকে পররাষ্ট্রনীতির নির্ধারক বলা হয়। পররাষ্ট্রনীতির নির্ধারকসমূহ হলো দেশের আয়তন, ভৌগলিক অবস্থান, জনসংখ্যা, ইতিহাস, অর্থনৈতিক সম্পদ, মতাদর্শ, সরকারের দক্ষতা এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রকৃতি, কূটনীতির গুণমান, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিক্রিয়া এবং অন্যান্য রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া।
পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করার সময় প্রতিটি রাষ্ট্রকে অভ্যন্তরীণ পরিবেশ ও পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি এবং অন্যান্য রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ার কথা বিশেষভাবে বিচারবিশ্লেষণ করতে হয়। সাধারণত পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করার সময় সরকারকে সামগ্রিকভাবে জাতির ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা, জাতীয় উন্নয়ন, জাতীয় মর্যাদা, জাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি, বিশ্বব্যবস্থা প্রভৃতির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয়।
কোনো রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি নির্ভর করে দেশটির নেতৃত্বের রাজনৈতিক দর্শন ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সফলতার জন্য শুধু শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করলেই হয় না, পররাষ্ট্রনীতির সফল বাস্তবায়নের জন্য থাকতে হয় শক্তিশালী নেতৃত্ব। নীতি ও নেতৃত্ব- এ দুইয়ের ওপরই নির্ভর করে একটি রাষ্ট্রের সাফল্য। স্বাধীন হওয়ার পর মাত্র দুই বছরের মধ্যে ১১৬টি রাষ্ট্রের সমর্থন আদায় করার জন্য কতটা কৌশলী ও বিচক্ষণ হওয়া দরকার, আজকের দিনে যেকোনো দেশের নেতা মাত্রই সেটি উপলব্ধি করবেন।
১৯৭০ সালে নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধু বেতার ভাষণে বলেছিলেন, “পররাষ্ট্রনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে- আজ বিশ্বজুড়ে যে ক্ষমতার লড়াই চলছে সে ক্ষমতার লড়াইয়ে আমরা কোনোমতেই জড়িয়ে পড়তে পারি না। এজন্য আমাদের অবশ্যই সত্যিকারের স্বাধীন ও জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে হবে। আমরা ইতিপূর্বে ‘সিয়োটো-সেন্টো’ ও অন্যান্য সামরিক জোট থেকে সরে আসার দাবি জানিয়েছি। ভবিষ্যতেও এ ধরনের কোনো জোটে জড়িয়ে না পড়ার ব্যাপারে আমাদের অঘোষিত সিদ্ধান্ত রয়েছে। সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ এবং বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী নির্যাতিত জনগণের যে সংগ্রাম চলছে সে সংগ্রামে আমরা আমাদের সমর্থন জানিয়েছি। ‘কারোর প্রতি বিদ্বেষ নয়, সকলের প্রতি বন্ধুত্ব’- এ নীতির ভিত্তিতে বিশ্বের সব রাষ্ট্রের বিশেষ করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আমরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী।” (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত ভাষণ, ড. এ এইচ খান সম্পাদিত, একাত্তর প্রকাশনী, প্রথম প্রকাশ ২০০৯, প্রথম খ-, পৃষ্ঠা-২২১) তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়লেই তা অনুভব করতে পারি। তিনি লিখেছেন, ‘নয়া রাষ্ট্র পাকিস্তানের উচিত ছিল নিরপেক্ষ ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা। আমাদের পক্ষে কারও সঙ্গে শত্রুতা করা উচিত নয়। সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুভাবে বাস করা আমাদের কর্তব্য। কোনো যুদ্ধ জোটে যোগদান করার কথা আমাদের চিন্তা করাও পাপ। কারণ আমাদের বিশ্বশান্তি রক্ষার জন্য সাহায্য করা দরকার। দেশের জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যও তা জরুরি।’ (শেখ মুজিবুর রহমান, ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, পৃষ্ঠা ২৭৯)।
মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯৭৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত মাত্র সাড়ে তিন বছর দেশ পরিচালনার সময় পেয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি নজিরবিহীন কূটনৈতিক সাফল্য অর্জন করেন। তিনি বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের স্বকীয় অস্তিত্ব জানান দেন। বঙ্গবন্ধু অনবদ্য কূটনৈতিক সাফল্যে মাত্র ৯০ দিনের মাথায় বাংলাদেশ থেকে ভারতের সৈন্য প্রত্যাহার করিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর কোন দেশ থেকে এত দ্রুত এবং অল্প সময়ের মধ্যে সেনা প্রত্যাহারের দৃষ্টান্ত বিশ্বে বিরল। ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি কৌশলের অন্যতম অর্জনগুলোর মধ্যে একটি। যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলো, ১৯৭২ সালে এপ্রিলের মধ্যে সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবিশ্বাস্য দ্রুততায় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। শুধু তাই নয়, ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিশ্বের ১০০ রাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে যোগ দেয় এবং ১৯৭৪ সালে ওআইসি সদস্যপদ লাভ করে। বঙ্গবন্ধুর অন্তর্ভুক্তিমূলক মানবিক কূটনীতির সুফল হিসেবেই ১৯৭৪ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে। ১৯৭৪ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু বাংলা ভাষায় ঐতিহাসিক ভাষণ দেন, এ ভাষণটি বাংলাদেশের কূটনীতির একটি দার্শনিক ভিত্তি দেয়। জাতিসংঘের মতো জায়গায় দাঁড়িয়ে বিশ্বের নিপীড়িত সব গোষ্ঠীর পক্ষে উচ্চকণ্ঠী হয়ে ওঠে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ। রাষ্ট্র হিসেবে নতুন। এর তিন দিকে বিশাল দেশ ভারত। পাকিস্তান নামের যে দেশটি থেকে সে আলাদা হয়েছে ধর্মীয় সংস্কৃতির দিক দিয়ে তার সঙ্গে কিছু মিল থাকলেও মূলধারার সংস্কৃতির দিক দিয়ে তা ছিল যোজন যোজন দূরের। বরং হাজার বছর ধরে বাঙালির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আকাঙ্ক্ষায় ভারতের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে বেশি মিল পরিলক্ষিত হয়। আর সীমানার উভয় পারের বাঙালির জীবনরেখায় মিল থাকাটাই স্বাভাবিক। এই প্রেক্ষাপটেই বাংলাদেশের অভ্যুত্থান এবং তার পররাষ্ট্রনীতির রূপরেখা বিকশিত হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীনতার সময় বিশ্ব রাজনীতিতে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিরাট প্রভাব। চীন তখন উদীয়মান শক্তি। এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো তখন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে সৌদি আরব তার সম্পদশালী অবস্থার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতির মূল কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
একটি নয়ারাষ্ট্রের স্থপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি ছিল ‘কারোর প্রতি বিদ্বেষ নয়, সকলের প্রতি বন্ধুত্ব।’ বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বর্তমানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি মূলত দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়। একটি হলো আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও দেশের আত্মসম্মান সমুন্নত রাখা। দ্বিতীয়ত, বহির্বিশ্বের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমে দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করা।
বঙ্গবন্ধু কর্তৃক সরকার পরিচালনাকালীন সময়ে পুরো বিশ্ব পুঁজিবাদী এবং সমাজতান্ত্রিক- এ দুই ভাগে বিভক্ত থাকলেও তিনি চেয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক রাজনীতির কোনো জোট নয়, বাংলাদেশ হবে শান্তিপূর্ণ দেশ, এটি হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড। বঙ্গবন্ধু শুধু নিজের দেশের মানুষের কল্যাণের কথাই ভাবেননি, তিনি হৃদয় দিয়ে অনুভব করতেন সারা বিশ্বের নিঃস্ব মানুষের দুঃখ-দুর্দশা। তিনি প্রায়ই বলতেন, “বিশ্বটা দুভাগে বিভক্ত- শোষক ও শোষিত। আমি শোষিতদের দলে।” মূলত বঙ্গবন্ধু ছিলেন এমন একজন বিশ্ব নেতা, যিনি সব সময়ই শোষিতদের পক্ষে কথা বলতেন।
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতির উল্লেখযোগ্য দিকগুলো ছিল- আত্মমর্যাদার পররাষ্ট্রনীতি, সবার সাথে বন্ধুত্ব ও মৈত্রী, জোটনিরপেক্ষ নীতি, বিদেশী রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তকরণের কূটনীতি, কোন রাষ্ট্রের প্রতি অতি নির্ভরশীল না হওয়া, প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহ, মুসলিম ও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন, বৈদেশিক সাহায্য আদায়ের কুটনীতি, উপনিবেশবাদ-বর্ণবাদ-সাম্রাজ্যবাদবিরোধী অবস্থান, বিশ্বের শোষিত মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে সমর্থন দান, ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও আস্থা রাখা, বিভিন্ন দেশের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন ইত্যাদি।
দেশ পুনর্গঠনের জন্য স্বাধীনতাপরবর্তী প্রতিটি দিনেই নতুন উদ্যমে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন বঙ্গবন্ধু। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের একটি সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত করা এবং এই দেশকে কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। বর্তমান বিশ্বের জটিল আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি দর্শন এখন আরো বেশি প্রাসঙ্গিক বলে বিবেচিত হয়। বিভাজন এবং অনিশ্চয়তার পরিমণ্ডলে বৃহৎ শক্তির দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে যে দূরদর্শীতা এবং সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি দর্শনে সেটির প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই।
বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের প্রথম মেয়াদে ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘে ‘শান্তি সংস্কৃতি’ রেজ্যুলুশন প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১৯৯৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রেজ্যুলুশনটি প্রথমবারের মতো গৃহীত হয়।
বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত কূটনৈতিক কাঠামো ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত এক দশকে বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থান করেছেন শক্তিশালী ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন। বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে এবং এই উন্নয়নের ধারা ক্রমবর্ধমান। বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ২য় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশ ও ভারত দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দুটি দেশ, যা ৫০টি বৃহৎ অর্থনীতির অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, বরং বহির্বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন ‘ইকোনোমিক মিরাকল’। বিশেষ করে এশিয়া- প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশ এর ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত কারণে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরূপ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে আমাদের গৌরব, মর্যাদা এবং উন্নয়নের অগ্রযাত্রার স্বার্থে যথোপযুক্ত পররাষ্ট্রনীতির কোনো বিকল্প নেই। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন স্মার্ট পররাষ্ট্রনীতি। তাই বর্তমান আধুনিক যুগেও বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি দর্শন আরো অধিক প্রাসঙ্গিক, তাঁর দূরদর্শিতার আবেদন চির অম্লান।