বিভা মোশাররফ
গণহত্যা “genocide” শব্দটি সর্বপ্রথম ১৯৪৪ সালে পোলিশ আইনজীবী রাফায়েল লেমকিন দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তার রচনা Axis Rule in Occupied Europe গ্রন্থে ইহুদি, জিপসি, অক্ষম, অসুস্থ লোকের উপর জার্মান নাৎসি বাহিনী দ্বারা সংঘটিত সহিংসতা ও গণহত্যার বর্ণনা করা হয়েছিল। রাফায়েল লেমকিন জেনোসাইড (genocide) শব্দটি গ্রীক “genos” যার অর্থ জাতি বা উপজাতি এবং ল্যাটিন “caedere (cide)” যার অর্থ হত্যা, শব্দ দুটি একত্রিত করে “genocide” শব্দটি তৈরি করেছিলেন। সুতরাং জেনোসাইড শব্দের অর্থ হলো জাতি হত্যা। তার মতে, ‘‘গণহত্যা বলতে আমরা বুঝি একটি জাতি বা জাতিগোষ্ঠীর ধ্বংস। এটি শুধুমাত্র একটি গোষ্ঠীর সদস্যদের পরিকল্পিতভাবে দৈহিক নির্মূল করা না বরং রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সংস্কৃতি, ভাষা, জাতীয় অনুভূতি, ধর্ম এবং জাতীয় গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক অস্তিত্ব এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, স্বাস্থ্য এবং মর্যাদা ধ্বংসের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মের একটি সমন্বিত পরিকল্পনাকে বোঝায়।’’ ১৯৪৫ সালে তিনি আরও নির্দিষ্টভাবে লিখেছেন যে, ‘‘যে ব্যক্তি কোনো জাতীয়, জাতিগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়ে এই ধরনের গোষ্ঠীর সদস্যদের জীবন, স্বাধীনতা বা সম্পত্তির বিরুদ্ধে হামলা চালায়, সে গণহত্যার অপরাধে দোষী।’’
১৯৭৫ সালে আর্মেনিয়ান গণহত্যার একজন অগ্রণী চিন্তাবিদ এবং বিশেষজ্ঞ, ভাহাকন এন. ডড্রিয়ানের মতে, ‘‘গণহত্যা হল একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর সফল প্রচেষ্টা, যা আনুষ্ঠানিক কর্তৃত্বের সাথে ন্যস্ত এবং ক্ষমতার সামগ্রিক সম্পদে প্রাধান্যের প্রবেশাধিকার সহ, জবরদস্তি বা প্রাণঘাতী সহিংসতার মাধ্যমে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সংখ্যা হ্রাস করা, যাদের চূড়ান্ত নির্মূল করা কাম্য এবং অতীব গুরুত্বপূর্ণ।’’
১৯৪৮ সালে অপরাধ হিসেবে গণহত্যাকে জাতিসংঘের The Convention on the Prevention and Punishment of the Crimes of Genocide বা জেনোসাইড কনভেনশনের ২ নং অনুচ্ছেদে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। অথচ ১৯৪৪ এর আগে এই শব্দটির অস্তিত্ব ছিল না। ওই সংজ্ঞায় গণহত্যার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে গিয়ে এর যে পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো হলো:
১/ পরিকল্পিতভাবে কোন জাতি বা গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে তাদের সদস্যদের হত্যা করা।
২/ গোষ্ঠীর সদস্যদের গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করা।
৩/ ইচ্ছাকৃতভাবে পুরো বা আংশিকভাবে কোনো জাতিকে শারীরিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে অগণিত জীবনের গোটা গোষ্ঠীর উপর চাপ সৃষ্টি করা।
৪/ গোষ্ঠী বা জাতির মধ্যে জন্ম রোধ করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেওয়া।
৫/ জাতির বাচ্চাদের জোর করে অন্য দলে স্থানান্তর করা এবং তাদের জন্মপরিচয় ও জাতিগত পরিচয় মুছে ফেলাকেও গণহত্যা বলে।
এর একটি বৈশিষ্ট্য থাকলেই সেটিকে গণহত্যা বলে বিবেচনা করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯৪৬ সালে জাতিসংঘ এক প্রস্তাবে গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ বলে ঘোষণা করে। ১৯৪৮ সালে প্রণীত এবং ১৯৫১ সালে কার্যকর এ আইনে গণহত্যার সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়। সে সংজ্ঞার সাতটি শর্তে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে নিঃসন্দেহে গণহত্যার অভিযোগ আনা যায়-
১/ ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সুপরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ, ২/ বাঙালি সামরিক, বেসামরিক, আধা-সামরিক, পুলিশ ও বৈমানিকদের সন্দেহবশত হত্যা, ৩/ ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইয়াহিয়ার তথাকথিত সাধারণ ক্ষমার বিস্তৃত জালে আত্মসমর্পণকারী বাঙালিদের হত্যা, ৪/ হাজার হাজার বাঙালিকে বন্দিশিবিরে রেখে নারকীয় নির্যাতন এবং হত্যা, ৫/ নারী ধর্ষণ ও হত্যা, ৬/ নিষ্পাপ শিশুহত্যা এবং ৭/ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড।
পশ্চিম পাকিস্তানের এই ২৩ বছরের শোষণনীতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যখন বীর বাঙালি মুক্তির আন্দোলন শুরু করে তা চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্যই নিরস্ত্র মানুষের ওপর ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামক অভিযানের মাধ্যমে গণহত্যার এক বিভীষিকাময় খেলায় উন্মত্ত হায়েনার ন্যায় হয়ে ওঠে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী। ২৫ মার্চ দিবাগত রাতেই সেই উন্মত্ত হায়েনার দল ৫০ হাজার নিরস্ত্র বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বেছে বেছে বুদ্ধিজীবী ও প্রগতিশীল গোষ্ঠীসহ বিশেষ মতাদর্শভিত্তিক একটি দল ও ধর্মীয় গোষ্ঠী নিশ্চিহ্ন করার উদ্যোগ নেয়ার কারণে জেনোসাইড (Convention on the Prevention and Punishment of the Crime of Genocide) আর্টিকেলের ২/ঙ ধারা অনুযায়ী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা যায়। নির্বিচার হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করে যে ব্যাপক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে হিন্দুগোষ্ঠীর ৬৯ লাখ (আগস্ট, ১৯৭১-এর মধ্যে) মানুষকে পরিকল্পিত পদ্ধতিতে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভীতসন্ত্রস্ত করে নদ-নদী, বনাঞ্চল ও জলাশয়ের মধ্য দিয়ে দেশছাড়া করা হয়েছিল, তাতে ৫ থেকে ৬ লাখ হিন্দু নিশ্চিহ্ন হয় অথবা মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে। এতে ৪ লাখের মতো শিশুসহ মুসলিম জনগোষ্ঠী নিশ্চিহ্ন বা গুম হয়ে যায়। তারা আর কখনোই ফিরে আসেনি। এরা এমন এক কৃষ্ণবিবরে নিমজ্জিত হয়েছিল যা থেকে কখনোই তাদের চিহ্নিত করা যায়নি। পরিবারের কাছে তারা নিখোঁজ হয়ে আছে। এতে জেনোসাইড আর্টিকেলে ২/গ (Genocide by deliberately inflicting conditions of life calculated to bring about physical destruction) ধারা অনুয়ায়ী গণহত্যা প্রমাণিত হয়। এ প্রক্রিয়ায় দেশের অভ্যন্তরে এবং অভিবাসনকালে কোনো কোনো ভিকটিমের শরীর ও মনে এমন ক্ষতিসাধন করা হয় যাকে আইনানুগভাবে গণহত্যা বলা যায়।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার কথা বলতে গেলেই উঠে আসে খুলনার চুকনগর হত্যাযজ্ঞের ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্বল্প সময়ে একক স্থানে সবচেয়ে বড় গণহত্যা ছিল এটি। চুকনগর ছিল খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের একটি গ্রাম। ১৯৭১ সালের ২০ মে, মাত্র এক প্লাটুন পাকিস্তানি সেনা ৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ১২ হাজার নিরীহ মানুষকে ব্রাশফায়ারের মাধ্যমে হত্যা করে। প্রকৃতপক্ষে এই গণহত্যায় এরচেয়ে বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। চুকনগরের পাশে ভদ্রা নদীতে অগণিত লাশ ভাসিয়ে দেওয়ায় নিহতের প্রকৃত সংখ্যা পাওয়া যায়নি। স্থানীয়ভাবেও সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। কারণ ওই গণহত্যায় শহীদদের বেশিরভাগ চুকনগর, ডুমুরিয়া বা খুলনার বাসিন্দা ছিলেন না। চুকনগরের গণহত্যার একটি বর্ণনা পাওয়া যায় পাশের গ্রাম রুস্তমপুরের শিক্ষক সরদার মুহাম্মদ নূর আলীর কাছে। তিনি বলেন, ‘সে এক নারকীয় দৃশ্য! ভোলা যায় না। আমাদের এলাকায় প্রায় ৪ মাইলব্যাপী এই হত্যাযজ্ঞ চলে। কিছু লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। দুর্গন্ধ এড়াতে কিছু লাশ মাটিচাপা দেওয়া হয়। এলাকার লোক ২ মাস পর্যন্ত ওই নদীর মাছ খায়নি। ভয়ে লোকজন ৫-৬ মাস পর্যন্ত বাজারেও আসেনি।’
পরবর্তীতে ১৯৭২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দিনাজপুর টিঅ্যান্ডটি অফিসের একটি টর্চার সেলের বিবরণ পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে লেখা ছিল, ‘দিনাজপুরে টিঅ্যান্ডটি অফিসে একটি টর্চার সেলে প্রায় ১০ হাজার বাঙালিকে নির্যাতন করেছিল পাকিস্তানি সেনারা। সেলের মেঝেতে ৩ ইঞ্চি পুরু রক্ত জমাট বাঁধা ছিল।’
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাত থেকে শুরু করে পরবর্তী দীর্ঘ নয় মাস ধরে যে হত্যাযজ্ঞ চলেছে তা পর্যালোচনা করলে আমরা বেশ সহজেই বুঝতে পারি তাদের মূল লক্ষ্যই ছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে সমূলে অর্থাৎ পুরো পরিবারসমেত উৎখাত করা যেন এই বাঙালি জাতির নেতৃত্বের মেরুদণ্ড চিরতরে ভেঙে যায়। তাছাড়াও হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর যে নিদারুণ নির্যাতন ও সুপরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে তার মূল উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তান থেকে সম্পূর্ণরূপে হিন্দু সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে পাকিস্তানের শুদ্ধিকরণ নীতি অনুসরণ করা যার মাধ্যমে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান উভয় মিলিয়ে শুধুমাত্র মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত হবে। সোজা কথায়, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের মাটিতে যে নির্বিচার যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা শুরু হয় তার অন্তর্ভুক্ত ছিল টার্গেট কিলিং, ধর্মভিত্তিক নিধন, জাতিগোষ্ঠীভিত্তিক নির্মূলকরণ এবং বেছে বেছে প্রগতিশীল ব্যক্তি নিধন। তাদের এই সুপরিকল্পিত অপরাধগুলোর সংঘটনের মাধ্যমেই তাদের পুরো বাঙালি জাতিকে সমূলে ধ্বংস করার উদ্দেশ্য (Intent to destroy) সুস্পষ্ট হয়।
জাতিসংঘের জেনোসাইড কনভেনশনের ২ নং অনুচ্ছেদে বর্ণীত বৈশিষ্ট্যগুলোর একটিও যদি সংঘটিত হয় তবে তা গণহত্যা বলেই বিবেচিত হবে। উপরোক্ত পর্যালোচনা থেকে সহজেই স্পষ্টত হয় যে, বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে চালানো গণহত্যায় উল্লেখিত পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে প্রথম চারটিই সংঘটিত হয়েছে। গণহত্যা প্রতিরোধ ও শাস্তি সংক্রান্ত জাতিসংঘ কনভেনশনের (UNPG) তৃতীয় অনুচ্ছেদে নিম্নলিখিত অপরাধগুলো শাস্তিযোগ্য হবে বলে বিবেচিত হয়েছে: ১/ গণহত্যা, ২/ গণহত্যা করার ষড়যন্ত্র, ৩/ গণহত্যার জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জনগণকে উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড, ৪/ গণহত্যা করার চেষ্টা করা, ৫/ গণহত্যায় জটিলতা। কারণ গণহত্যার বিষয়টি এতটাই ভয়াবহ যে আন্তর্জাতিক আইন, চুক্তি বা কূটনীতির উৎস জাতিসংঘের ১৯৬৯ সালের ভিয়েনা কনভেনশনে গণহত্যাকে ‘ইয়ুস কজেনস্’ (Jus Cogens) বা সর্বমান্য আইনের আওতায় ফেলা হয়েছে। এই ‘ইয়ুস কজেনস’- এর বিধান অনুযায়ী, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো অপরাধ কোন রাষ্ট্র বা সরকার ক্ষমা করতে পারবে না, এমনকি কোন দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতেও এই অপরাধের ক্ষমা নেই।
এত ত্যাগ স্বীকারের পরেও বাংলাদেশ এখনও গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সমর্থ হয়নি, উপরন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা চলেছে, শহীদ ও নির্যাতিতের সংখ্যা নিয়ে চলছে দেশি-বিদেশি অপপ্রচার। এর পেছনে বহুমুখী কারণ থাকলেও মূল কারণ হল, গণহত্যা ও নির্যাতনকে যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়ার মানসিকতা। অথচ আমাদের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মূল দিকটি ছিল নৃশংস গণহত্যা ও নির্যাতন। মুক্তিযুদ্ধে যারা স্বজন হারিয়েছে সেসব শহীদ পরিবার, নির্যাতিতা নারী, ঐ সময়ে দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া শরণার্থীগণ সেসব দগদগে কষ্টের একটি স্মৃতিও আজ অবধি ভুলতে পারেননি এবং কোনোদিন তারা ভুলতেও পারবেন না। এরপরেও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গণহত্যা ও নির্যাতন যথেষ্ট গুরুত্ব পায়নি। সময়োপযোগী পদক্ষেপের অভাবে ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার বিষয় সুদূরপরাহত বা প্রায় অসম্ভব বলে বিবেচিত। এ পরিপ্রেক্ষিতে ওই দাবি থেকে সরে এসে ওই দিবসকে International Day of Resistance against War and Cruelty (যুদ্ধ ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিরোধ দিবস) হিসেবে ঘোষণা দেয়ার দাবি জানাতে হবে। ২৫ মার্চের দিবাগত রাতে বাঙালিদের মনে যে ক্ষোভ জমাট বেঁধেছে, তা স্বাধীনতা সংগ্রামে অসামান্য শক্তিশালী অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। এটিকে সামনে এনেই আলোকোজ্জ্বল করতে হবে বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় ও মূল্যবোধ এবং সেই লক্ষ্যে একাত্তরে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ অনস্বীকার্য।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ৩ আগস্ট একাত্তরে বাংলাদেশ জেনোসাইডের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রস্তাব পাস করতে আরেকটি জেনোসাইড বিশেষজ্ঞদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল জেনোসাইড স্কলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (আইএজিএস) প্রতি আহ্বান জানানো হয়। তথ্য প্রযুক্তির যুগে জেনোসাইড ও এর নিবৃত্তি: একবিংশ শতকের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই আহ্বান জানানোর কথা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এরপর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আইএজিএস প্রেসিডেন্ট মেলানি ও‘ব্রায়েনের কাছে প্রস্তাবের খসড়া পাঠান একাত্তরে শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের ছেলে তৌহীদ রেজা নূর।
একাত্তরে নিরস্ত্র বাঙালি জাতির ওপর পাকিস্তানিদের নির্মম হত্যাযজ্ঞকে ‘গণহত্যার’ স্বীকৃতির দাবি, বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার দাবি সহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও ‘রুখে দাড়াও বাংলাদেশে’র মতো কিছু সংগঠন তাদের দীর্ঘ সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। তবে বিশ্ব দরবারে একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি সুষ্ঠুরূপে লাভ না করা পর্যন্ত সরকারকে নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।