এলকপ আয়োজিত “বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি: তৃণমূল জনগোষ্ঠীর সাথে মতবিনিময়” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

এমপাওয়ারমেন্ট থ্রু ল অফ দ্য কমন‌ পিপল (এলকপ) কর্তৃক “বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি: তৃণমূল জনগোষ্ঠীর সাথে মতবিনিময়” শীর্ষক একটি সেমিনার গত ২৬ ফেব্রুয়ারি, রবিবার সিলেটের রোজ ভিউ হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সেমিনারটিতে স্বাগত বক্তব্য রেখেছেন এলকপের প্রিন্সিপাল রিসার্চ কন্সালটেন্ট মোহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। তিনি তার বক্তব্যে এলকপের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন এবং এলকপের বর্তমান গবেষণা প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি এই প্রকল্প ও প্রকল্পের অধীনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে মতবিনিময় সভায় আলোকপাত করেন।

এলকপের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রধান, সহকারী অধ্যাপক গাজী সাইফুল হাসান সিলেটের চার জেলা হতে আগত স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে মত বিনিময় সভা পরিচালনা করেন। স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণী, পেশার প্রতিনিধিরাও এই সভায় উপস্থিত ছিলেন।

এই মতবিনিময় সভায় আগত স্থানীয় বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গরা তাদের মতামত সকলের সামনে উপস্থাপন করেন। সিলেট জেলায় কদমতলীর  তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি লিপি হিজড়া বলেন,  বাংলাদেশের উন্নয়নের আলোকে গত ১০ বছরে জীবনযাপন কিছুটা সহজ হয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এখনও অনেক সুযোগ রয়েছে উন্নয়নের। যেমন ৫০ বছর বয়স হলে শুধুমাত্র তারা ৬০০ টাকার একটি মাসিক ভাতা পেয়ে থাকেন। কিন্তু তার আগে তারা কোনপ্রকার ভাতা সুবিধা পান না।

সিলেটের খাদিমনগর উপজেলার ধর্মযাজক জোসেফ গোমেজ এ সভায় তার বক্তব্য রাখেন। তিনি সিলেট বিভাগীয় অঞ্চলে চা-শ্রমিক এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার বিষয় নিয়ে কাজ করেন এবং তাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি তিনি তার বক্তব্যের মাধ্যমে তুলে ধরেন।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার একটি চা বাগানের শ্রমিক ও ক্ষুদ্র স্ট্রীট ফুড ব্যবসায়ী বিষ্ণু হাজরা বলেন প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতির পরও তাদের বোকেয়া বেতন এখনো পরিশোধ করা হয় নি। তিনি আরও জানান যে তার চা বাগানের শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে এবং চা বাগানগুলোতে সরকারের তদারকির অভাব রয়েছে। তার মতে, দেশের উন্নয়ন ও মানবাধিকার রক্ষায় দুর্নীতি বন্ধ করা সবচেয়ে বেশি জরুরি।

এডভোকেট বাপ্পা গোস্বামী বলেন আইনজীবীরা সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। মণিপুরী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি মিস বাব্‌লী সিনহা মণিপুরীদের অধিকার রক্ষায় সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং আরও কিছু বিষয়ে কাজের সুযোগ রয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন।

পেশ ইমাম করিম সব ধর্মের মানুষের জন্য উপাসনার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারি উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন যে ইমাম মুয়াজ্জিন দের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করা উচিত।

মতবিনিময় সভার উদ্দেশ্য ছিলো তৃণমূল পর্যায়ে মানবাধিকার পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা। পাশাপাশি তাদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সুপারিশমালা প্রণয়ন করা। এরই ধারাবাহিকতায় এলকপের পক্ষ থেকে এবারের মতবিনিময় সভার শেষে একটি ইম্প্যাক্ট এসেসমেন্ট ফর্ম পূরণের জন্য বিতরণ করা হয়। এলকপের রিসার্চ কন্সালটেন্ট মো. জহির উদ্দিন সোহাগের ধন্যবাদ বক্তব্যের মাধ্যমে মতবিনিময় সভাটি শেষ হয়।