মুভি রিভিয়্যু: দ্য বয় ইন দ্য স্ট্রাইপড পাজামাস

আরিফুর রহমান

চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: মার্ক হারম্যান, প্রযোজনা: ডেভিড হেইম্যান, বিষয়বস্তু: হলোকস্ট, ভাষা: ইংরেজি, সময়: ৯৪ মিনিট, মুক্তি: ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৮

গত ৬০ বছরে প্রায় উল্লেখযোগ্য হারে চলচ্চিত্র এবং সাহিত্যের বিষয় হয়ে উঠেছে হলোকাস্ট, যেটি কিনা সাম্প্রতিক মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলোর অন্যতম। ‘দ্য বয় ইন দ্য স্ট্রাইপড পাজামাস’ ২০০৮ সালে প্রকাশিত জন বয়েনের একই নামের একটি উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে এবং মুভিটিতে ৮ বছর বয়সী দুটি নিষ্পাপ ছেলের দৃষ্টিতে হলোকাস্টের নৃশংসতা দেখানো হয়েছে।

মুভিটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির প্রেক্ষাপটে নির্মাণ করা হয়েছে। ৮ বছর বয়সী ব্রুনো এবং তার পরিবার বার্লিন ছেড়ে নাৎসী নির্মূল শিবিরের কাছে বাস করে যেখানে তার বাবা সম্প্রতি কমান্ড্যান্ট পদে উন্নীত হয়েছেন। তার বন্ধুদের থেকে দূরে এমন একটি জায়গায় সে চলে এসেছে যেখানে খেলার জন্য কোন শিশু নেই। এমন পরিবেশে এসে ব্রুনো বিরক্ত এবং একাকী বোধ করতে শুরু করে। হঠাৎ একদিন সে তার নতুন বাসার জানালা থেকে একটি খামারের মতো জায়গা দেখতে পায় যা আসলে ইহুদিদের জন্য একটি বন্দী শিবির ছিল। একইসাথে সেখানে সে অনেক বাচ্চাদের দেখে, এবং মনে করে যে শেষ পর্যন্ত তার কিছু খেলার সাথী হলো। ব্রুনো ছেলেটি একটু ডানপিটে স্বভাবের হওয়ায় তার পিতামাতার নিষেধ উপেক্ষা করে সেই ক্যাম্পে চলে যেতো প্রায়ই। সেখানে তার সাথে পরিচয় হয় স্যামুয়েলের যে ছিল তার সমবয়সী একজন ইহুদি ছেলে।

বন্দি শিবিরের কাঁটাতারের বেড়া তাদের আলাদা করা সত্ত্বেও, ব্রুনো এবং স্যামুয়েল একটি বন্ধুত্বের সর্ম্পক স্থাপন করে। ধীরে ধীরে স্যামুয়েল বন্দি শিবিরের আসল রহস্য ব্রুনোর কাছে উন্মোচন করে যা ব্রুনোকে পরবর্তীতে তার বাবা এবং তার পেশা নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ করে দেয়। এসবের মধ্যে একদিন হঠাৎ করে স্যামুয়েলের বাবা ক্যাম্পে হারিয়ে যায় এবং ব্রুনো তা জানতে পেরে স্যামুয়েলের বাবাকে খুঁজে বের করার জন্য কাঁটাতারের বেড়ার নীচে একটি গর্ত খনন করে, তারপর বন্দি শিবিরদের একটি “ইউনিফর্ম” পরে ক্যাম্পে প্রবেশ করে। দুর্ভাগ্যবশত, বন্দীদের শেষ একটি দলকে যখন গ্যাস চেম্বারে পাঠানো হচ্ছে ঠিক তখনই ব্রুনো ক্যাম্পে ইহুদি বন্ধুর সাথে মারা যায়।

দ্য বয় ইন দ্য স্ট্রাইপড পাজামাস গতানুগতিক যুদ্ধভিত্তিক কোন মুভি না। পরিচালক মার্ক হারম্যান মুভির ক্লাইম্যাক্স তৈরিতে বেশ মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। তিনি আট বছর বয়সী ব্রুনোর দৃষ্টীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন নাৎসী ক্যাম্পের ভয়াবহতা সাবলীলভাবে তুলে ধরেছেন। পরিচালক হারম্যান এক মূহর্তও ভুলতে দেয়নি যে মুভিটি মাত্র আট বছর বয়সী একজন বাচ্চা ছেলের অনুধাবণ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নৃশংসতা দেখানো হয়েছে। মুভিতে আরও দেখানো হয়েছে যে ব্রুনো যখন তার বাবার কাজের আসল উদ্দেশ্য জানতে পারে তা জানার পর তার বাবাকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে দেখার দ্বিধা-দ্বন্দ্ব।

সম্ভবত, এ ছবিটির সবচেয়ে আর্কষনীয় বিষয় হল এই মুভিটি কোন স্পষ্ট সহিংসতা এবং বর্বরতাকে অন্তর্ভুক্ত না করে এটি আমাদের বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বর্বরতার ইতিহাসের কথা মনে করিয়ে দেয়। কিন্ত তাই বলে এই মুভিটির সমালোচনা কম নেই। অধ্যাপক কেভিন জন হেলার মনে করেন এই মুভিটি একটি ভুল বার্তা দেয় যে আসল ট্র্যাজেডি ক্যাম্পে হাজার হাজার ইহুদিদের হত্যা নয়, বরং ব্রুনোর মতো জার্মান ছেলের ওই ক্যাম্পে দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু। আবার ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে ইংল্যান্ডে প্রায় এক তৃতীয়াংশ শিক্ষক হলোকাস্টের ভয়াবহতা বুঝাতে শিক্ষার্থীদের ‘দ্য বয় ইন দ্য স্ট্রাইপড পাজামাস’ উপন্যাসটি পড়ান যা প্রকারন্তে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নাৎসীদের প্রতি ভুলভাবে সহানুভূতির জন্ম দেয়।

যাইহোক, কিছু সমালোচনা থাকলেও, দ্য বয় ইন দ্য স্ট্রাইপড পাজামাস হলোকাস্ট নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে এবং বিশ্বব্যাপি সমাদৃত হয়েছে। ব্রুনো এবং স্যামুয়েলের নিষ্পাপ মূর্তি এই সিনেমার অন্যতম দিক। দুটি ছেলে যারা কি না তাদের বয়সের তুলনায় বেশ বুদ্ধিমান, পার্থিব বৈষম্যগুলোকে উপেক্ষা করে যে বন্ধুত্ব করা যায় সে ক্ষমতা দেখিয়েছে তারা। পরিচালক ব্রুনো, তার পরিবার এবং তার ইহুদি বন্ধু স্যামুয়েলের মধ্যে সম্পর্ক বর্ণনা করার ক্ষেত্রে দুর্দান্ত কাজ করেছেন।